ম্যানারিজমে নিজেকে যে কোনও পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতেন রবি ঘোষ। অসাধারণ কমিক টাইমিং। তার সঙ্গে দাপুটে অভিনয়। স্বয়ং সত্যজিৎ রায় তাঁর অভিনয়ের ফ্যান ছিলেন।
মঞ্চ হোক বা পর্দা, রবি ঘোষ থাকা মানে দর্শকদের বিনোদনের কোনও অভাব নেই। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর ২৫তম মৃত্যু বার্ষিকী। মৃত্যুর এতদিন পরেও সেই ভাবে কোথায় পুরস্কার পেলেন তাঁর প্রতিভার।
চিরকাল কমেডিয়ান ট্যাগ বয়ে বেরিয়েছেন। কোনও অজানা কারণে তাঁর মতো অভিনেতাকে অভিনেতার মতো করে দেখা হয়নি। হয়তো অজান্তে খানিকটা আফসোসও করেছেন এর জন্য।
দর্শকদের অফুরন্ত ভালোবাসা পেলেও প্রতিভার কদর হিসাবে সেই অর্থে জোটেনি কোনও বড় সম্মান। ১৯৩১ সালের ২৪ নভেম্বর জন্ম হয় রবি ঘোষের।
আদালতের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলেন সিনেমার পর্দায়। ভাগ্যিস এসেছিলেন! বাংলা সিনেমা তাঁর অভিনয়ে দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হয়েছে।
রবি ছিলেন পেশাদারিত্বের এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। একদিন ‘ঠগিনী’ ছবির শুটিং ফ্লোরে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়েছিল। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের আগে পর্যন্ত কাজ চলেছিল একটানা। প্যাক-আপ হয়ে যাওয়ার পরে ইউনিটের সবাই জানতে পেরেছিল, সেদিন সকালেই মা-কে দাহ করে তিনি কাজে এসেছেন।
নিয়মিত শরীরচর্চার শুরু কলেজের ব্যায়ামাগারেই। পরবর্তী কালে ‘জিম’ না গেলেও, মর্নিং ওয়াক এবং বাড়িতেই নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কাজ করেন। তবে প্রথম জীবনে অভিনেতা নন, বডিবিল্ডার হতে চেয়েছিলেন।
অভিনয় ছিল তাঁর রক্তে। কলেজে পড়ার সময় থেকেই নাটক করা শুরু। বন্ধুদের নিয়ে আশুতোষ কলেজের ছাদে চলত তাঁর দল ‘বন্ধুমন’-এর মহড়া।
পর্দায় অভিনেতা রবি ঘোষের যে রূপ দেখা যায়, ব্যক্তি হিসেবে একেবারেই তিনি তার বিপরীতের। একটি গুরুগম্ভীর মানুষ, যিনি সময় পেলেই রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়ে সময় কাটাতেন।
প্রথম জীবনে কমিউনিজিমে দীক্ষিত হয়েও পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ পড়তেন। সে অর্থে নিজে পূজার্চনা না করলেও, অন্যের বিশ্বাস-ভক্তিকে কখনও ছোট করেননি।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ জীবনাবসান হয় এই চরিত্রাভিনেতার। সত্যজিৎ রায়ের অস্কার না পাওয়া অভিনেতাদের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে স্থান ছিল রবি ঘোষের।