নব্বইয়ের দশকের সঙ্গে ২০২১-র তালিবানদের বেশভূষা, অস্ত্রশস্ত্রের বেশ ফারাক লক্ষ্য করা যায়। নতুন চকচকে অস্ত্র, যুদ্ধের আধুনিক সরঞ্জাম। কিন্তু এই পরিবর্তনের পিছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ জোগাচ্ছে কারা?
যদিও তাদের বর্বর অভ্যাসে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের নিয়ন্ত্রণে অনেক প্রদেশে চলছে মেয়েদের স্কুল। কয়েক যুগ পিছিয়ে পড়া রীতিতে অধ্যয়ন চালানো হচ্ছে সেখানে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তালিবানদের জীবনযাপন ও কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
তালিবান যোদ্ধারা আগের থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের কাছে রয়েছে অঢেল অর্থ।
কিন্তু এই বিপুল অর্থ আসে কোথা থেকে? এটি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ২০১৬ সালে ফোর্বস তালিবানকে ১০ টি সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে পঞ্চম ধনী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। আইএসআইএস -এর তৎকালীন সময়ে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের টার্নওভার ছিল এবং এই অবস্থানে শীর্ষে ছিল। তালিবানের সঙ্গে পাঁচ নম্বরে ছিল বার্ষিক ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের টার্নওভার।
ফোর্বস তালিবানদের প্রাথমিক আয়ের উৎসকে মাদক পাচার, সুরক্ষার নামে অর্থ সংগ্রহ এবং অনুদান হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। এই পরিসংখ্যানটি ২০১৬ সালের, যখন আফগানিস্তানে তালিবানদের তেমন আধিপত্য ছিল না।
রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি কর্তৃক প্রাপ্ত একটি গোপন ন্যাটো রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তালিবানদের বার্ষিক বাজেট ছিল ১.৬ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বসের ২০১৬ রিপোর্টের ভিত্তিতে গত চার বছরের তাদের আয় প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি ন্যাটো রিপোর্টের উদ্ধৃতি তুলে ধরে জানিয়েছে, তালিবানরা তাদের রাজস্বের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০১৯-২০২০অর্থবর্ষে তালিবানরা খনন থেকে ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার, ওষুধ থেকে ৪১৬ মিলিয়ন ডলার, বিদেশী অনুদান থেকে ২৪০ মিলিয়ন ডলার, কর থেকে ১৬০০ মিলিয়ন ডলার এবং রিয়েল এস্টেট থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
ন্যাটোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তালিবানের নেতৃত্ব একটি স্বাধীন রাজনৈতিক ও সামরিক সত্তা হওয়ার জন্য স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে।
বিদেশি অনুদান ও অবদানের ওপর নির্ভরতা কমাতে তালিবানরা বহু বছর ধরে কাজ চালাচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালে আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা তার মোট অর্থের প্রায় অর্ধেক বিদেশী উৎস থেকে পেয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে তালিবানদের মোট আয়ের প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
একই অর্থ বর্ষে আফগান সরকারের সরকারি বাজেট ছিল ৫.৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে মাত্র ২ শতাংশেরও কম ছিল প্রতিরক্ষার জন্য। তালিবানকে আফগানিস্তান থেকে দূরে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর আফগান সরকারকে ব্যাপকভাবে অর্থ সাহায্য করছিল।
যদিও, এখন আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফগান বাহিনীকে তালিবানদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণে ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার সামরিক ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এখন আফগানিস্তানে তালিবানদের জন্য ভাল ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যা আমেরিকার চেয়েও দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।
শুদ্ধ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, তালিবানদের বিনিয়োগের রিটার্ন দিন দিন বাড়তেই থাকছে। নিজেদের অর্থের সম্ভারে তারা সমৃদ্ধ। তাদের ব্যবসার উন্নতি হচ্ছে। অধিক লাভের সম্ভাবনা বেড়েছে। আফগান সরকারের থেকেও অধিক শক্তিশালী হয়ে গেছে তালিবানরা।