আফগানিস্তানে একটি বড় রাজনৈতিক রদবদল হতে চলেছে। তালিবানদের ক্রমবর্ধমান শক্তির কাছে পর্যদুস্ত আফগান সরকার। যা পরিস্থিতি তাতে আফগানিস্তানে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। যার প্রধান হতে চলেছেন আলী আহমেদ জালালি।
তালিবান যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে রাজধানী কাবুল শহর ঘিরে ফেলেছে। এমন অবস্থায় বর্তমান আফগান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আফগানিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন আলী আহমদ জালালি। ৮১ বছর বয়সী এই আলী আহমদ জালালি আফগানিস্তানের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলে এসেছেন।
আলী আহমদ জালালি আফগানিস্তানের দিক থেকে শুধু একজন বড় নেতা নন, কূটনীতির দিক থেকেও তিনি অত্যন্ত দক্ষ। জালালি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। রাষ্ট্রদূত থেকে অধ্যাপক, সেনার কর্নেল থেকে সরকারের মন্ত্রী , আলী আহমদ জালালি প্রতিটি পদ সাফল্যের সঙ্গে সামলেছেন। যার কারণে তিনি আফগানিস্তানের রাজনীতি বোঝেন এবং তালিবানদের উপরও তার ভাল দখল রয়েছে।
আলী আহমদ জালালি আফগানিস্তানের রাজধানী শহর কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার তিনি মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে বসবাস শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি আফগানিস্তানে ফেরেন এবং তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২০০৪ সালে তাকে পুনরায় আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পদে তিনি ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি জার্মানির প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া জালালী আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্নেল। আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) হানা দেওয়ার পর পাকিস্তানের পেশোয়ারভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলনে বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থতির জন্য তিনি বর্তমান আফগান সরকারের নেতৃত্বের দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা তালিবানের হাতে চলে যাওয়া নিয়ে ট্যুইটে জালালি লিখেছেন, ‘দুর্বল নেতৃত্ব এবং রণকৌশলের অভাবের কারণে আফগান সেনাকে আজ এই মূল্য চোকাতে হল। এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্রাদেশিক রাজধানী বেদখল হওয়া আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।’
এখন তালিবানদের ক্রমবর্ধমান বিস্তারের মাঝে জালালি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আলোচনা চলছে যে এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তালিবানরা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু আপাতত আফগানিস্তানের কাছে অন্য কোন বিকল্প নেই।
জালালির বড় পদক্ষেপগুলি কী ছিল?
আলী আহমদ জালালির কাছ থেকে মানুষের আশা রয়েছে, কারণ তিনি যখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন আফগান ন্যাশনাল পুলিশের একটি সম্পূর্ণ বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই সেনাবাহিনীতে প্রায় ৫০ হাজার সৈন্যককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর বাইরে সীমান্ত পুলিশের ১২হাজার অতিরিক্ত সৈন্যও প্রস্তুত ছিল।
সন্ত্রাস থেকে অনুপ্রবেশ পর্যন্ত, এমন অনেক দিক ছিল যার উপর জালালির কৌশল ছিল স্পষ্ট এবং অত্যন্ত কঠোর। এর বাইরে, ২০০৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ২০০৫ সালের সংসদ নির্বাচনে জালালি একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমন অবস্থায় যখন তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লাগাম হস্তান্তর করা হচ্ছে, তখন তার সামনে পাহাড়ের মতো চ্যালেঞ্জ। এখন কীভাবে এবং কত তাড়াতাড়ি তিনি আফগানিস্তানকে এই সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেন, সেটাই দেখার বিষয়। এদিকে রবিবারই কাবুল ছেড়ে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তাজিকিস্তানে চলে গিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।