রবিবার গভীর রাতে মায়ানমারের রাজধানীর দখল নিয়েছে সেনা। সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা তারা কেটে দিয়েছে। তাই মায়ানমারের রাজধানী নেপিটোয় এখন বিছিন্ন সব ফোন ও ইন্টারনেটের লাইন। রাজধানী নেপিটো-সহ দেশের সমস্ত বড় শহরগুলিতে টহল দিচ্ছে সেনা।
ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি-র নেত্রী আং সান সু কি-সহ বেশ কয়েকজন শাসক-নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। সুকি-কে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
মায়ানমারের সরকারি গণমাধ্যমে সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। এক বছরের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনাবাহিনী।
মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ বেশ কিছু দেশ।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন যে আমেরিকা অত্যন্ত উদ্বিগ মায়ানমারে যেভাবে সামরিক বাহিনী গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হেনেছে। সম্প্রতি হওয়া নির্বাচনের ফলাফলকে বদলানো বা মায়ানমারে গণতন্ত্র আসার পথে কোনও বাধা সৃষ্টি করা হলে সেটার বিরোধিতা করবে আমেরিকা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও সতর্ক করে দেন জো বাইডেনের মুখপাত্র।
অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী ম্যারিসে পেইনও বলেছেন যে তাঁরা চান ভোটের ফলাফলকে মর্যাদা দেওয়া হোক ও সুকি কে মুক্ত করা হোক।
গত নভেম্বরের ভোটের পর পয়লা ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল সংসদ। তার আগেই আটক করা হয় ৭৫ বছর বয়সী সুকি-কে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অহিংস প্রতিবাদ করে জনপ্রিয় হন তিনি।
প্রায় ৫০ বছর মিলিটারি শাসন ছিল মায়ানমারে। সুকির সংগ্রামের জেরেই শেষ হয় সামরিক রাজ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় দেশে।
গত বছর নভেম্বর মাসে সংসদ নির্বাচন হয় দেশে। শালক দল এনএলডি-র বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিপুল ভোটে জেতে এনএলডি। মায়ানমার সংসদের নিন্মকক্ষের ৪২৫টি আসনের মধ্যে ৩৪৬টিতে জয়ী হয় তারা।
কিন্তু, রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ে বিগত দিনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সু কি সরকারের। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও করেছিল মায়ানমারের সেনাবাহিনী।
২০০৮ সালে সামরিক নজরদারিতে মায়ানারে যে সংবিধান তৈরি হয়েছে, সেখানে পার্লামেন্টে কোনও বড় আইন রুখে দেওয়ার মতো আসন সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলিও সেনার হাত রয়েছে। ফলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেও, গণতান্ত্রিক শাসন পুরোপুরি কখনই প্রতিষ্ঠা হয়নি সে দেশে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা শুধু ভারতের প্রতিবেশি দেশের অভ্যন্তরের বিষয় নয়, বরং এই ঘটনা প্রভাবে ফেলবে ভারতের বিদেশনীতির সুরক্ষা এবং কূটনীতিতে।
প্রাথমিকভাবে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশ ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মায়ানমারকে দিয়েছে বলেও জানিয়েছিলন তিনি।
চলতি ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ-মায়ানমারের মধ্যে ডিজি লেভেলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল । সেখানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হত। এবার তা বিশ বাঁও জলে চলে গেল।
দীর্ঘ দেড় দশক বন্দিদশা কাটিয়ে ২০১৫ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে মায়ানমারের নেত্রী নির্বাচিত হন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সুকি। কিন্তু দেশের পশ্চিমে রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উচ্ছেদ এবং গণহত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মহলে সুকি-র ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুকির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মায়ানমারের সেনাবাহিনী। সুকি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তারা। এই ইস্যুতে সুকি রাষ্ট্রসংঘে যে কথাবার্তা বলছে, মায়ানমারের সেনাবাহিনী তা পছন্দ ছিল না। রাখাইনে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে সুকি এবং সেনাবাহিনীর সম্পর্ক বিপজ্জনক মোড় নিতেও শুরু করেছিল। তার মাঝেই ঘটে গেল এই সেনা অভ্যত্থান।