হামাস এবং ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া শুরু হল। বহু প্রতীক্ষিত এই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ শুরু হতেই আশার আলো দেখছেন গাজার বাসিন্দারা। প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইজরায়েলি সেনারা গাজার কিছু অংশ থেকে সরতে শুরু করেছে।
ধীরে ধীরে ঘরে ফিরতে শুরু করলেন গাজার কয়েকটি অংশের বাসিন্দারাও। তবে আদৌ কি সংঘাতের অবসান ঘটবে? নতুন সূর্যোদয় হবে যুদ্ধে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া গাজা ভূখণ্ডে? আশঙ্কার মেঘ যেন কিছুতেই কাটছে না। গাজাবাসীদের অবস্থা 'ঘরপোড়া গোরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়' এই প্রবাদবাক্যটির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকার বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সী ইসমাইল জায়দা বলেন, ‘আমার বাড়িটি যে এখনও দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। তবে জায়গাটা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমার প্রতিবেশীদের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পুরো এলাকা গুঁড়িয়ে গিয়ছে।’ যুদ্ধবিরতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এই গাজাবাসী আরও বলেন, ‘ওরা যেভাবে বলছে, আদৌ কি তা শেষ হয়েছে? কেন কেউ এসে আমাদের বলছে না, সত্যিই যুদ্ধবিরতি হয়েছে এবং আমরা নির্ভয়ে থাকতে পারি কি না।’
ইজরায়েল সরকার শুক্রবার সকালে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় হিংসা থামানো সম্ভব হবে এবং এরপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আটক ইজরায়েলি যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইজরায়েল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের এই ধাপে বলা হয়েছে, প্যালেস্তাইনের বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইজরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে ইজরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার শুরু হবে।
গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরের বাসিন্দারা বলেছেন, ইতিমধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে কিছু ইজরায়েলি সেনা সরে গেছে। তবে গোলাগুলির শব্দ এখনও যেন কানে লেগে আছে গাজাবাসীর।
গাজার কেন্দ্রস্থল নুসেইরাত শিবিরে দেখা গিয়েছে, সেনারা তাদের অবস্থান থেকে সরে পূর্বে ইজরায়েলি সীমান্তের দিকে চলে গিয়েছেন। তবে এদিন ভোরে গুলির শব্দ শোনার পর অন্য কয়েকজন সেনা ওই এলাকায় অবস্থান নেন।
ইজরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীর ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী সড়ক থেকেও সরে গিয়েছে। শত শত মানুষ শহরের কেন্দ্রে ফেরার আশায় সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, কাছাকাছি জায়গায়গুলির শব্দ শোনার কারণে অনেকেই এগোতে সাহস পাননি। শুধু অল্প কয়েকজন হেঁটে জায়গাটি পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
উদ্ধারকর্মীরা আগে গাজা শহরের যেসব এলাকায় যেতে পারেননি, এখন সেখানে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এর আগে হামলা হয়েছে এমন এলাকা থেকে কমপক্ষে ১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।