Titan Submersible Incident Is Warning: পাঁচ ধনকুবের সমুদ্রের ১২ হাজার ৫০০ এর নিচে গিয়ে কার্যত মৃত্যুবরণ করলেন। তাঁদের টাইটান সাবমারসিবল সাবমেরিন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৬০০ ফিট দূরে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কারও দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি। হয়তো বিস্ফোরণের কারণে তা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে অথবা তাঁদের শরীরের অংশ সামুদ্রিক জীবরা খেয়ে ফেলেছে। এমন অ্যাডভেঞ্চার গোটা দুনিয়ার জন্য সতর্কবাণী।
ডুবন্ত জাহাজের ধ্বংসবশেষ দেখা কোনও টাইম ক্যাপসুল এর চেয়ে কম নয়। এটি আপনাকে সেই দুনিয়ায় নিয়ে যায় যা, আপনি যে বিষয়ে শুনেছেন, এটা সিনেমায় দেখেছেন। এই ধ্বংসাবশেষ দেখার কয়েকটি পদ্ধতি হতে পারে। এর মধ্যে একটি হল ওশিয়ানগেট এক্সপিডিশন যা টাইটান সাবমারসিবল এর মাধ্যমে দেখানো হতো।
টাইটান সাবমারসিবল উত্তর আটলান্টিকে টাইটানিক জাহাজে ধ্বংসাবশেষ দেখানোর জন্য পাঁচজনকে নিয়ে সমুদ্রের ভিতরে গিয়েছিল। সাবমারসিবল থেকে ১৮ জুন ২০২৩ সেটি গোঁত্তা খেয়ে প্রায় পৌনে দু'ঘণ্টা পরে যোগাযোগ ছিন্ন হয়। এরপর শুরু হয় তাদের খুঁজে বের করার কাজ। যা শেষমেষ ব্যর্থ হয়। শুধু টাইটান সাবমারসিবল এর ধ্বংসাবশেষ মেলে।
সিএসআইআর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওসিএনওগ্রাফির প্রাক্তন বৈজ্ঞানিক শীলা ত্রিপাঠি জানিয়েছেন যে, আমরা এটা জানি না যে, আসলে টাইটান সাবমারসিবলের সঙ্গে কি হয়েছে? কেন সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়? সমুদ্রের ভিতর জলবায়ু কেমন ছিল? টেকনিক্যাল কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছিল কি না, বা অন্য কোনও ঘটনা উঠেছে কিনা, তা আমাদের সতর্ক করে ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য।
যদি কোনও এমন প্রাচীন ডুবন্ত জাহাজ দেখতে চান, তাহলে সেটি মিউজিয়ামে রাখা উচিত, কিন্তু এটা সম্ভব হয় না। যদিও এমন জাহাজকে স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করে তার ডেটা এবং ছবির প্রদর্শনী করা যেতে পারে। ভিডিও চালানো যেতে পারে, যাতে লোকেরা সমুদ্রে না গিয়ে বাইরে থেকে সেগুলি দেখতে পায়।
ধ্বংসাবশেষের পর্যটন দু'দশক আগে রবার্ট টাইটানিক এর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করেন। নিউফাউন্ডল্যান্ড এর সমুদ্রের নীচে এটি পাওয়া যায়। এরপরে আমেরিকার কংগ্রেসে ট্রিটি তৈরি করা হয় যেই ধ্বংসাবশেষকে সুরক্ষিত রাখা হবে। এরপরে টাইটানিক দেখতে যাওয়ার ভিড় শুরু হয়ে যায়। ধ্বংসাবশেষ পর্যটন দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে। পাঁচজন লোকের মৃত্যু তাতে কিছুটা হলেও দাঁড়ি লাগিয়ে দেবে।
শীলা ত্রিপাঠী বলেন যে, ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপসমূহে, গোয়া, বিশাখাপত্তনাম এবং লাক্ষাদ্বীপের সমুদ্রে এই ধ্বংসাবশেষ পর্যটনের স্কোপ রয়েছে। লোকেরা সমুদ্রের ভিতর গোঁত্তা খেয়ে প্রাচীন জাহাজের এবং সমুদ্রের জীবজন্তুর দর্শন করে আসতে পারেন। কিন্তু এটা অত্যন্ত সীমিত সংখ্যায়। ভারত একটি ট্রপিকাল দেশ এবং প্রচুর বর্ষা এবং ঝড়ের কারণে এই পর্যটন বাড়তে পারেনি।
বছরে মাত্র দু-তিন মাসই পর্যন্ত ধ্বংসাবশেষ পর্যটন ভারতে সম্ভব। এর মধ্যে খুব কম লোক শামিল হন। কারণ এর খরচ অত্যন্ত বেশি এবং এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ নাগরিকদের পর্যটনের জন্য সমুদ্রের ভেতর নিয়ে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। প্রাণের ঝুঁকি থেকে যায়। কিন্তু এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে খুব সাধারণ কাজ।
ভারতের ডুবে থাকা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পর্যটন ব্রিটিশ আমল থেকেই জড়িত রয়েছে। ভারতীয় সমুদ্রে কোথায় কোথায় ডুবোজাহাজ রয়েছে?গোয়াতে, সেন্ট জর্জে, রক আইল্যান্ডে, লাক্ষাদ্বীপ-এ মিনিকয় দ্বীপ এবং সুহেলি পার তামিলনাড়ুর কুংফুর এবং উড়িষ্যার কোনার্কে এই সমস্ত জায়গায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রে নীচে রয়েছে।
সমস্যা হলো এটা যে, গোটা দুনিয়ার একাধিক জায়গায় জাহাজ ডুবে রয়েছে। প্রায়ই এগুলির বিষয়ে মৎস্যজীবীরা খোঁজ করেন বা তাঁদের মৎস্য শিকার করতে গিয়ে খোঁজ মিলে যায়। তাঁরা যখন জাল ফেলেন, মাঝেমধ্যে ডুবোজাহাজের টুকরো উঠে আসে। আর নতুবা কোনও বড় কোম্পানি সমুদ্রের নীচে আটকে থাকা জাহাজ খুঁজতে রোবট, সাবমারসিবল বা ডুবুরি পাঠায় খোঁজার জন্য।
ভারতে একাধিক জায়গায় জাহাজ ডুবে রয়েছে। যেসব সমুদ্রের ভিতরে প্রাচীন ইতিহাস ডুবে রয়েছে। কিন্তু খুঁজে বের করার লোক নেই। আমরা জানি না যে, ভারতীয়রা কোন পথে সমুদ্রের রাস্তায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পেলে এই ইতিহাস এবং বহু লুকিয়ে থাকা তথ্য সামনে নিয়ে আসতে পারে।
সমস্যা এটাই যে সঙ্গে ভারতীয় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার কাজ শুরু হবে। তারপরে ধ্বংসাবশেষ পর্যটন খুব দ্রুত বাড়বে। তখন যদি সঠিক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে টাইটানের মতো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।