বিহারের মাউন্টেন্ট ম্যান জিতেন রাম মানঝি। একক চেষ্টায় পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন তিনি। একইভাবে কার্যত একা হাতে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে রেল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন প্রভাত কর। কিন্তু, তাঁর স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই করোনা কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ। অথচ এই রাজ্য থেকে একাধিক নেতা-নেত্রী রেলমন্ত্রী হয়েছেন? তারপরও কেন পূরণ হল না কান্দিবাসীর রেলের স্বপ্ন?
কান্দি এলাকার বাসিন্দাদের ট্রেন ধরার জন্য কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার সালার কিংবা খাগড়াঘাট স্টেশনে যেতে হয়। সেই কারণে বহু বছর ধরে এলাকার উপর দিয়ে রেল লাইনের দাবি করে আসছেন বাসিন্দারা। এবিএ গণিখান চৌধুরী রেলমন্ত্রী থাকার সময় কান্দির উপর দিয়ে রেল লাইন নিয়ে যাওয়ার
১৯৯২সাল থেকে কান্দি রেলওয়ে সংযুক্তিকরণ কমিটি আন্দোলন শুরু করে। প্রভাত কর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০০৯ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কান্দির উপর দিয়ে নতুন রেল লাইনের কথা ঘোষণা করেন।
কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার চৌরিগাছা স্টেশন থেকে সাঁইথিয়া স্টেশন পর্যন্ত ওই রেল লাইন হওয়ার কথা ছিল। পরের বছর ওই রেল পথের অনুমোদন দেয় রেল বোর্ড। ২০১১-২০১৩ সালের মধ্যে ৫৭.৫০ কিলোমিটার লম্বা ওই রেলপথ তৈরির জন্য সমীক্ষাও হয়। এই সময়কালে রেলমন্ত্রী ও রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন যথাক্রমে মুকুল রায় ও অধীর চৌধুরী।
তারপরও কেন কান্দির উপর দিয়ে রেল লাইন গেল না? কারণ, জমি-জট। আবার বর্তমান কেন্দ্র সরকারের পিঙ্ক বুকে ওই রেললাইনের জন্য কোনও বরাদ্দও ছিল না।
তবে এই নিয়ে হতাশ হননি প্রভাত কর। তিনি বলেছিলেন, আরও জোরদার আন্দোলন করবেন। করেওছিলেন। রাজ্যপালের কাছে জমা দিয়েছিসেন স্মারকলিপি।
তবে সেই আন্দোলন মাঝপথেই থেমে গেল। চলে গেলেন আন্দোলনে প্রাণপুরুষ প্রভাত কর। কান্দির বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ রাজ্য ও কেন্দ্র এই দুই সরকারের গাফিলতির জেরে কান্দিতে রেল চালু হয়নি। রাজ্য থেকে এতজন রেলমন্ত্রী থাকলেও তাদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কান্দির বাসিন্দারা।
প্রভাত করের মৃত্যুর পর কান্দির রেল আন্দোলন কি আর আগের মতো গতিময় থাকবে? তার উত্তর ভবিষ্যতই দেবে।