ইলিশ, ইলিশ আর ইলিশ
বর্ষার জল গায়ে পড়তে না পড়তেই মন প্রাণ আঁকুপাঁকু করে ইলিশের খোঁজে। কোথায় গেলে কমে ভাল ইলিশ পাওয়া যাবে, কিংবা সেরা ইলিশটি পাতে তুলতে জীবন বাজি রাখতেও অনেকে রাজি। বিশেষ করে দুই বাংলায় ইলিশের নামে এক গ্রাস ভাত অনেকেই বেশি তোলেন।
ইলিশ নিয়ে লড়াই অনেক লম্বা
পশ্চিমবাংলায় আবার ইলিশ নিয়ে ঘটি-বাঙাল যুদ্ধও বেধে যায়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থকরা ক্লাব জিতলেই ইলিশ নিয়ে আসেন। তা বলে মোহনবাগান সমর্থকরা কি ইলিশ খান না ? আলবাৎ খান। তাঁদের যুক্তি। ইলিশের দলকে হারিয়ে ইলিশ খাওয়ার মজাই আলাদা। আসলে ইলিশ কেউ ছাড়বেন না।
ইলিশে আসক্তি থাকলে বিপদ
কিন্তু বেশি ইলিশ খেলেও আবার মুশকিল। কে বলেছেন ? এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হচ্ছে ইলিশ বেশি খেলে বাসা বাঁধতে পারে ভয়ানক রোগ। নিয়মিত ইলিশভোজীদের সাবধান করছে ওই রিপোর্ট। ভারতে একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ইলিশ বেশি খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।
ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অব ইন্ডিয়ার সতর্কবাণী
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অব ইন্ডিয়া (এফএসএসআই) গত বছর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে বেশি খেলে বিপজ্জনক বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ১২০ রকমের সামুদ্রিক মাছকে। যাদের বেশি খেলেই হিস্টামিন বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই তালিকায় সার্ডিন, টুনা, ম্যাকরেল-এর মতো সামুদ্রিক মাছ যেমন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে প্রিয় ইলিশও।
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতেই বিপত্তি
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও এফএসএসআই-এর অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে গোটা দেশে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরে অনেকটাই বেড়েছে। যা আগে অনেক কম ছিল। সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এই ধরনের কিছু মাছে হিস্টিডিন নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত বেশি আছে। যা থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়ে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়।
অ্যালার্জি থাকলে ইলিশ নয়
তাই যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা ইলিশ থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া (এএএনআই)-এর ব্যাখ্যা, শ্বাসের সমস্যা, গায়ে গোটা বেরনো, নাক দিয়ে জল, অবিরল হাঁচি, পেটে খিঁচ ধরা, গায়ে জ্বালা-ভাব তৈরি হওয়া, ফোঁড়া বেরোনোর মতো ঘটনা ঘটে। ওই সামুদ্রিক মাছগুলোতে বেশি হিস্টামিন থাকায় এমন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়।
সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করায় সমস্য়া
এফএসএসআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যা হচ্ছে জল থেকে মাছটি তুলে, তারপর সেটি মহাজনের কাছে আসার পর, সেখান থেকে আড়তদার হয়ে বিভিন্ন প্রদেশের বাজারে পৌঁছচ্ছে। সেখান থেকে ছোট বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। তারপর তা কিনে বাড়িতে নিয়ে এসে রান্না করা হয়। এই দীর্ঘ সময়ে যে তাপমাত্রায় মাছটি থাকার কথা সেটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না। তাতেই সমস্যা তৈরি হয়।
শরীর ও পরিবার দুই ঠিক রাখতে ইলিশ সমঝে খান
জীববিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে কোনও সামুদ্রিক মাছে কমবেশি হিস্টিডিন থাকে। ডিকার্বোস্কিলেজ নামে একটি উৎসেচকের প্রভাবে এই হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়। সেটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। অন্য অনেক মাছেই এই বিষ থাকলেও, যেহেতু এ দেশে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে ইলিশের জনপ্রিয়তা বেশি, তাই সতর্ক করা হয়েছে। তাই সস্তা হোক দামী, ইলিশ খাওয়ার আগে শরীর এবং পরিবারের কথা ভেবে, ভেবেচিন্তে খান।